শক্তিশালী বুদ্ধিমত্তার ফাঁদ

শক্তিশালী বুদ্ধিমত্তার ফাঁদ

শক্তিশালী বুদ্ধিমত্তার ফাঁদ 

বুদ্ধিমত্তা নিঃসন্দেহে এক মহান আশীর্বাদ। কিন্তু এই বুদ্ধিমত্তা মাঝে মাঝে এক ভয়ংকর ফাঁদে রূপ নেয়। যারা অত্যন্ত বুদ্ধিমান, তাদের মনে প্রায়শই সচেতন বা অচেতনভাবে একটি শ্রেষ্ঠত্ববোধের জন্ম হয়। এই শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতি তাদের অন্য কাউকে স্বীকৃতি দিতে বাধা দেয়। এ অনুভূতির প্রকাশ ঘটে নানা রূপে।

কিছু মানুষের অভ্যাস এমন হয় যে, তাদের সামনে কোনো কথা বলা হলে, তারা তৎক্ষণাৎ এর সঙ্গে নিজেদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা মেলানোর চেষ্টা করেন। তারা বলে ওঠেন, "আমি তো এই কথাটা অমুক সময়ে বলেছিলাম।" আবার এমনও দেখা যায়, কেউ কেউ অন্যের কথা শুনেই সেটি কেটে দিয়ে নিজেদের ভাষায় তা পুনরায় ব্যক্ত করেন। এছাড়া কেউ কেউ পুরো বক্তব্য উপেক্ষা করে একটি ক্ষুদ্র বিষয় তুলে নেন এবং সেটি নিয়েই এমনভাবে আলোচনা করেন যেন সেটিই মূল কথা, বাকি সবকিছু অপ্রাসঙ্গিক।

আরও একটি প্রকার রয়েছে, যারা কোনো কথা শোনার সময় তা ইতিবাচক মানসিকতার সঙ্গে গ্রহণ করতে পারেন না। তাদের মন সবসময় একটি খুঁত খুঁজে বেড়ায়—একটি দুর্বল দিক, যেখানে সমালোচনা করা সম্ভব। এরপর তারা সেই দুর্বল দিকটি ধরে বসে থাকেন, বাকি সব বক্তব্য অগ্রাহ্য করে দেন।

এই মানসিকতা একজন বুদ্ধিমান মানুষের জন্য এক চরম বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে তার মানসিক বিকাশ সীমিত থেকে যায়; গভীরভাবে বিকাশ লাভ করে না। তার ব্যক্তিগত স্বার্থের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলিতে—যেমন তার চাকরি বা তার সন্তানদের ভবিষ্যৎ—সে অবশ্যই গভীর মনোযোগ দেয়। এ কারণেই এ বিষয়গুলিতে তার বুদ্ধি কার্যকরভাবে কাজ করে। কিন্তু জীবনের অন্যান্য দিক সম্পর্কে তার উদাসীনতা থেকে যায়, আর তাই সেসব ক্ষেত্রে তার মানসিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এইভাবে, সে একপ্রকারে হয়ে ওঠে বুদ্ধিমান বোকা বা বোকার মতো বুদ্ধিমান।
মওলানা ওয়াহিদুদ্দিন খান, আল-রিসালা, এপ্রিল ২০০৯

Leave a comment