রাগ নয়, ক্ষমাই একজন ঈশ্বরে বিশ্বাসীর পরিচয়

রাগ নয়, ক্ষমাই একজন ঈশ্বরে বিশ্বাসীর পরিচয়

রাগ নয়, ক্ষমাই একজন ঈশ্বরে বিশ্বাসীর পরিচয়
(নবীজীর সময় এ মুসলমান এর আচরণ আর আমাদের সময় এ তাদের আচরণ ....)
একজন গ্রাম্য লোক মদীনায় এল। সে নবীজির (সা.) মসজিদে প্রবেশ করল, যেখানে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাহাবাদের সঙ্গে অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ, সেই গ্রাম্য ব্যক্তি মসজিদের ভেতর দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে লাগল।
সাহাবারা তাঁকে বাধা দিতে উদ্যত হলে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন—"তাকে বাধা দিও না। বরং একটি বালতি পানি আনো এবং ওখানে ঢেলে দাও।"
সাহাবারা ঠিক তাই করলেন।
(বুখারী, মুসলিম, নাসায়ী, তিরমিযি, আবু দাউদ, মুয়াত্তা)
এই ঘটনার গভীর প্রভাব পড়েছিল সেই গ্রাম্য লোকটির ওপর। সে নিজের গোত্রে ফিরে গিয়ে পুরো ঘটনা বর্ণনা করল। বলল—
“আমি এমন একটি কাজ করেছিলাম !, উপাসনালয়ের ভেতর প্রস্রাব করেছিলাম। তবে আল্লাহর কসম, মুহাম্মদ (সা.) আমার উপর রাগ করেননি, আমাকে ধমক দেননি।”
(وَاللهِ مَا قَهَرَنِي مُحَمَّدٌ، وَاللهِ مَا زَجَرَنِي مُحَمَّدٌ)
এই কথা শুনে তার গোত্রের লোকেরা গভীরভাবে প্রভাবিত হলো। এমনকি পুরো গোত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করল।
এবার আসা যাক বর্তমান যুগের একটি ঘটনার দিকে।
হোলির দিন।
একদল হিন্দু তরুণ হোলি খেলতে খেলতে শহরের এক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। পথে একটি মসজিদ পড়ল। হঠাৎ তাদের একজন উৎসাহের বশে একটি পিচকারি মসজিদের দিকে ছুঁড়ল। মসজিদের এক দেয়ালে হোলির রঙের ছিটা লাগল।
এই দৃশ্য দেখে স্থানীয় মুসলমানরা রাগে ফেটে পড়ল। তারা তরুণদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ল।
মারধরের এই খবর দাবানলের মতো গোটা শহরে ছড়িয়ে পড়ল। সর্বত্র দাঙ্গা ছড়িয়ে গেল। মুসলমানরা সেই রঙ মেনে নিতে পারেনি, এর পরিণাম হল—শহরের রাস্তাগুলো তাদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেল।
তাদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাট পুড়িয়ে দেওয়া হলো।
এই দুটি ঘটনার পার্থক্য কেন?
এর কারণ হলো—রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন এক স্রষ্টার দেয়া ধর্মে প্রতিষ্ঠিত, আর বর্তমান যুগের মুসলমানরা অবস্থান করছে এক জাতীয়তাবাদী ধর্মে।
যারা ঈশ্বরের ধর্মে চলে, তারা ফেরেশতাদের সহায়তা লাভ করে।
মানুষের হৃদয়ের বন্ধ দরজাগুলো তাদের জন্য খুলে যায়।
আর যারা চলে জাতীয় বা গোষ্ঠীগত ধর্মে, তাদের একমাত্র সঙ্গী হয়—নিজস্ব প্রবৃত্তি।
তাদের কাজ জন্ম দেয় জেদ ও আত্মম্ভরিতার আগুন, যা ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ায়।
তাই তারা যা দেয়—ঘৃণা ও প্রতিশোধ—সেটাই তাদের ফিরে আসে।
সত্যিকারের ঈশ্বরের ধর্ম ধৈর্য, ক্ষমা ও হিকমতের মাধ্যমে অন্তর জয় করে; আর গোষ্ঠীগত ধর্ম উত্তেজনা ও প্রতিশোধের মাধ্যমে বিভেদ সৃষ্টি করে।
~ মওলানা ওয়াহিদুদ্দিন খান এর উর্দু বই: দীন এ ইনসানিয়াত
পৃষ্ঠা:৮২
অনুবাদ : সুরজ মন্ডল ভাই

 

Leave a comment