সদয় আচরণ

সদয় আচরণ

সদয় আচরণ

কুরআনে মহান স্রষ্টার দুটি গুণবাচক নাম বর্ণিত হয়েছে— "আর-রহমান" এবং "আর-রহীম", অর্থাৎ অতুলনীয় দয়াবান ও সীমাহীন করুণাময়। একইভাবে, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে "রহমাতুল্লিল আলামিন" (সারা বিশ্বের জন্য রহমত) বলা হয়েছে। তাঁর সর্বাধিক উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য ছিল এই বিশ্বজনীন দয়ার গুণ।

কুরআনে মানবজাতিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে—
"তারা একে অপরকে ধৈর্যের উপদেশ দেবে এবং দয়ার শিক্ষা দেবে।" (সূরা আল-বালাদ: ১৭)
অর্থাৎ, প্রতিটি মানুষ যেন অপরের প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল আচরণ করে। এমনকি যদি অন্যের কাছ থেকে অবিচার ও কষ্টের সম্মুখীনও হতে হয়, তবুও ধৈর্য ধরে করুণাময় মনোভাব বজায় রাখতে হবে। বিখ্যাত তাফসিরকার কুরতুবি ব্যাখ্যা করেছেন:
"وَتَوَاصَوْا بِالْمَرْحَمَةِ" বা "পরস্পর দয়ার পরামর্শ দাও"— এর অর্থ হলো সৃষ্টিজগতের প্রতি দয়ার আচরণ করা।

হাদিসেও দয়ার শিক্ষা ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

"দয়ালু ব্যক্তিদের প্রতি দয়াময় ঈশ্বর দয়া করবেন।" (তিরমিজি, কিতাবুল বীর্র ওয়া সিলা)

আরও বলেছেন:

"তোমরা পৃথিবীর প্রতি দয়া করো, আকাশের মালিক তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।" (আবু দাউদ, কিতাবুল আদব)

একটি হাদিসে বলা হয়েছে:

"আল্লাহ তাঁর সেই বান্দাদের প্রতি দয়া করেন, যারা অন্যদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে।" (মুসনাদ আহমদ)

দয়ার শিক্ষা ইসলামের এত ব্যাপক ও গভীর যে এটি সমগ্র বিশ্বের নৈতিক দর্শনে প্রতিধ্বনিত হয়েছে। প্রতিটি ভাষায়, প্রতিটি সংস্কৃতিতে এর প্রতিফলন দেখা যায়। ভারতের একজন মুসলিম কবি এই চেতনার প্রতিধ্বনি করে বলেছেন:

"ধরার বুকে কর দয়া,
আকাশ হতে দয়া পাবে তা।"

ইসলামে দয়ার গুরুত্ব এতটাই বিশাল যে এটিকে ব্যক্তিগত বিশ্বাসের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। তাই, নবী (সা.) সতর্ক করে বলেছেন:

"যে মানুষ অন্যদের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করবেন না।" (সহিহ বুখারি, কিতাবুত তাওহীদ)

এ শিক্ষা শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং সমাজ ও বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি। দয়া ও সহানুভূতি ছাড়া একটি আদর্শ মানবসমাজ গঠন করা সম্ভব নয়।

~ মওলানা ওয়াহিদুদ্দিন খান এর বই দীন এ ইনসানিয়াত থেকে পৃষ্ঠা ৬৯ এর অনুবাদ

Leave a comment