ঈশ্বর উপলব্ধি

ঈশ্বর উপলব্ধি

ঈশ্বরের জ্ঞান একটি সচেতন উপলব্ধি। কেউ শুধুমাত্র “আল্লাহ, আল্লাহ” - পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে ঈশ্বরকে জানতে পারে না, কিংবা ধ্যানে বসে এমন এক অবস্থায়তেও পৌঁছে  যেতে পারেনা, যেখানে মনে হয় হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দনে “আল্লাহ আল্লাহ” ধ্বনিত হচ্ছে। এই ধরনের বিষয়গুলো মূলত একটি সম্পর্কহীন অনুশীলনের মতো, যার সঙ্গে ঈশ্বরের প্রকৃত জ্ঞানের কোনো সম্পর্ক নেই।

একটি হাদিসে বলা হয়েছে: “আল্লাহ মানুষকে তাঁর নিজের চেহারায় সৃষ্টি করেছেন।” (সহীহ বুখারী) এই ভিত্তিতে একটি আরবি প্রবাদ রয়েছে: “যে নিজেকে চিনেছে, সে তার প্রভুকে চিনেছে।

এই কথাটি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গভীর অর্থ বহন করে। এর মানে হলো, যেমন মানুষ একজন সচেতন সত্তা, তেমনই আরও বৃহৎ মাত্রায় ঈশ্বরও একজন সচেতন সত্তা। এই সচেতন সত্তা সমগ্র বিশ্বজগতে একটি ব্যতিক্রম হিসেবে অবস্থান করে। এই বাস্তবতা মানুষকে তার স্বতন্ত্র মর্যাদা জানায় এবং একই সঙ্গে ঈশ্বরের অস্তিত্বকেও প্রমাণ করে। কারণ, যদি এই বিশাল সৃষ্টিতে মানুষের মতো একটি ছোট ব্যতিক্রম বিদ্যমান থাকে, তবে এটিই প্রমাণ করে যে আরও বড় এক ব্যতিক্রম—ঈশ্বর—নিশ্চয়ই আছেন। মানুষের অস্তিত্ব নিজেই ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ হয়ে দাঁড়ায়।

এই বক্তব্যকেই হাদিসে বলা হয়েছে এইভাবে: “আল্লাহ মানুষকে তাঁর নিজের চেহারায় সৃষ্টি করেছেন,” অর্থাৎ যেমন ঈশ্বর নিজে একজন ব্যতিক্রমী অস্তিত্ব, তেমনি মানুষও এই সৃষ্টিজগতে এক ব্যতিক্রমী সত্তা। মানুষ যদি তার এই ব্যতিক্রমী রূপ নিয়ে চিন্তা করে, তবে সে নিশ্চিতভাবে ঈশ্বরকে আবিষ্কার করবে। সে তখন বলে উঠবে: “আমি আছি, সুতরাং ঈশ্বরও আছেন।
বই: কিতাবে মারেফাত
লেখক: মওলানা ওয়াহিদুদ্দিন খান

Leave a comment